মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মানুষ বানরের উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। বানরের দল বনাঞ্চল থেকে লোকালয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন ফসল ও মৌসুমী ফলের ক্ষতি করছে। মাঝে মাঝে মানুষের উপর হামলা করে আহতও করছে। ফলে বানর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের গয়াসপুর, কাজিরহাট, টিকরপাড়া ও করিমপুর এলাকার মানুষজন।
এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত ৫-৬ বছর আগে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি চা বাগান থেকে ১৫-২০টি বানর লোকালয়ে এসে ফল-ফসল নষ্ট করতো। এখন বানরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত দুই বছর ধরে একাধিক দলে শতাধিক বানর এসব গ্রামে এসে তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রথম দিকে সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এখন উৎপাত আরো বেড়ে গেছে। গ্রামে ঢুকে কৃষকের শাক-সবজি ছিঁড়ে নষ্ট করছে। আম-কাঠাল, লিচু, আনারসসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ক্ষতি করছে। বনে-বাঁদাড়ে খাবার না পেয়ে এখন প্রায়ই গ্রামবাসীদের বসতঘরে ঢুকে পড়ছে। বিস্কুট, মুড়িসহ ঘরে রাখা খাবার নিয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো ঘরের হাড়ি-পাতিল নিয়ে যাচ্ছে, বাসনপত্র ভাঙছে।
খাবার না পেয়ে বাড়িতে থাকা মানুষের উপর আক্রমন করছে। বানরের হামলায় গত বৃহস্পতিবার ওই ইউনিয়নের কাজিরহাট গ্রামের বৃদ্ধা করিফুন্নেছা (৭৫) আহত হয়েছেন। তার বাম হাতের কবজি ভেঙ্গে গেছে। ৭-৮ দিন আগে গয়াসপুর গ্রামের গিয়াস মিয়া (১৮) ও মীরখান (৫) আহত হয়েছেন। এছাড়া কয়েক বছরে এই গ্রামগুলোর অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বানর মারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ায় সাধারণ মানুষ এগুলোকে মারছেন না। এই উৎপীড়ন থেকে মুক্তি দিতে বন বিভাগ ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী এসব গ্রামের বাসিন্দাদের।
গয়াসপুর গ্রামের জায়েদ খান বলেন, আমাদের ফার্মের কর্মচারী গিয়াস মিয়া ও ভাতিজা মিরখানকে কয়েকদিন আগে কিছু বানর হামলা করে আহত করে। বানরের উপদ্রবে আমাদের ৩-৪টি গ্রামের মানুষ অতিষ্ট। পাশের গ্রামের করিফুন্নেছাকে বৃহস্পতিবার আক্রমণ করে হাত ভেঙে দিয়েছে। বন বিভাগের লোকজন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে ক্ষুব্ধ মানুষ বানর মেরে ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
করিমপুর গ্রামের মো. সালিকুর রহমান বলেন, বানর এলাকার শাকসবজিসহ নানা ফসল নষ্ট করছে। ঘরে ঢুকে বিভিন্ন খাবার, হাড়ি-পাতিল নিয়ে যাচ্ছে। কখনো আবার মানুষের উপর আক্রমন করছে। আমরাসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছি।
মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লিটন মিয়া বলেন, গত কয়েক বছর ধরে শত শত বানর আমার এলাকার গ্রামগুলোর ফল-ফসল নষ্ট করছে। মানুষের বাড়িঘরে ঢুকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো মানুষের উপর হামলা করছে। বানরের হামলার ভয়ে তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছেন না।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। এই ঘটনা সম্পর্কে আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে শিগগিড়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, বানরের উৎপাতের বিষয়টি এখন জানলাম। বানরগুলোকে বনে সরিয়ে দিতে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগকে বলব। কি কারণে এসব বানর লোকালয়ে আসছে বিষয়টি জানতে তাদেরকে সার্ভে করতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।