মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় পারিবারিক ও জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে মাওলানা আশরাফ মিয়া’র বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। আলেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করায় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এলাকার ১’শ জন গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে লিখিত হলফনামা দিয়েছেন। এলাকাবাসী বলছেন, এক নারীর পরকীয়া ও অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় উল্টো ধর্ষণ মামলায় আসামী হয়ে কারাগারে রয়েছেন আশরাফ।
অভিযোগ উঠেছে সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগষ্ট পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্ররোচনায় এ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।
অনুসন্ধান বলছে, ধর্ষণ মামলারবাদী তাছলিমা বেগম এলাকায় পরকীয়া, অসামাজিক ও অশালীন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। বিগত দিনেও তার বিরুদ্ধে এরকম অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাছলিমার পরকীয়া নিয়ে এলাকায় অনেক শালিস হয়েছে। ২ বছর পূর্বে তাছলিমা এক নির্মাণ শ্রমিকের (রাজমিস্ত্রী) সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁওয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে শালিসের মাধ্যমে এটার সমাধান হয়ে ফের পূর্বের স্বামীর সাথে সংসার করছে।
মামলার এজহারে তাছলিমা বেগম উল্লেখ করেন, ৩০ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাওলানা আশরাফ মিয়া তার ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তাছলিমা ৪ আগষ্ট মৌলভীবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৪৪/২০২৪)।
এলাকার বাসিন্দা আব্দুল বাছিত উস্তার, জামিল আহমদ বলেন, উনার বিরুদ্ধে এলাকায় কোনো অভিযোগ নেই। তিনি সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত। তিনি ব্যবসা ও পরিবার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। লোভী মহিলা তাছলিমা বেগম আওয়ামীলীগ নেতাদের পরামর্শে সরকার পতনের আগের দিন এ মামলা দায়ের করে।
এবিষয়ে জানতে অভিযোগকারী তাছলিমা বেগম এর অভিযোগে দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তার স্বামী মো. সুজাত মিয়া ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজার শহর থেকে বাড়িতে যাচ্ছি। ১০ মিনিট পরে বাড়িতে গিয়ে আপনাকে আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি। প্রতিবেদক ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে ৪.১৩ মিনিটে ফের ফোন করলে সুজাত মিয়া বলেন, সে ইসলামপুর তার বোনের বাড়িতে চলে গেছে। ধর্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের সাথে অশালীন কথা বলেন। শালীনতার মধ্যে কোনো উত্তর দেননি। কুলাউড়ার টিলাগাঁওয়ের নির্মাণ শ্রমিকের সাথে আপনার স্ত্রী পরকীয়া করে পালিয়ে গিয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সুজাত মিয়া প্রতিবেদককে গালিগালাজ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
তাছলিমা বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক রাজনগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা’কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা হয়েছে। তবে রাজনগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মধুছন্দা দাশ বলছেন, তাছলিমা বেগম নামে কারো ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত তিনি করেননি।
ইউপি সদস্য শেখ রফিক রিপন বলেন, মাওলানা আশরাফ মিয়া’র অতীতের এরকম কোনো রেকর্ড নেই। উনাকে একজন ভালো আলেম হিসেবে জানি। অভিযোগকারী বিগত ২/৩ বছর আগে তাদের ঘরের নির্মাণ শ্রমিকের (রাজমিস্ত্রী) সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন পরে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শালিস করে সুজাত মিয়ার ঘরে আবার এনে দেন।
কামারচাক ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, বিগত ১০ বছর যাবত আশরাফ মিয়া’কে খুব ভালো করে জানি। তিনি এধরনের কাজ করার লোক নন। বিগত দিনে উনার বিরুদ্ধে এরকম কোনো অভিযোগ উঠেনি। তাছলিমা বেগম পরকীয়ার সাথে সম্পৃক্ত। এলাকার সবাই তার এ বিষয় গুলো জানেন। পার্শ্ববর্তী বাড়ির এক লোকের সাথে তাছলিমার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। মাওলানা আশরাফ তাছলিমার অসামাজিক কাজের প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে আশরাফকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় জড়ানো হয়েছে।
এইচ.এ/এফ.এইচ