সদ্য সমাপ্ত দেশের ষষ্ঠ জনশুমারিকে ‘ডিজিটাল শুমারি’ আখ্যা দেওয়া হলেও সিলেটে অনেকেই গণনার বাইরে থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গণনাকারীরা অনেকের বাসায়ই যাননি এমন অভিযোগ অহরহ উঠেছে। এ বারের জনশুমারি থেকে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
তিনি ছাড়াও সিলেটের অনেকেই জনশুমারি থেকে বাদ পড়ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- শতভাগ লোকজনকে গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা দুলাল আহমদ বলেন, আমিসহ আমার পুরো পরিবার জনশুমারি থেকে বাদ পড়েছেন। তাহলে কি আমরা হিসেবের বাহিরে থেকে গেলাম?
তার মতোই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জিখরুল ইসলামও বলছেন- গণনার জন্য তার বাড়িতে কেউ যাননি। আরও বাদ পড়ার অভিযোগ করেছেন- দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের জাবেদ আহমদ। তিনি বলেন, আমি সরকারের হিসেব থেকে বাদ পড়লাম! আমার বাড়িতে কেউ আসেনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জর্জ কোর্টের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটভিউ-কে বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৮-১০ জন লোক জনশুমারির হিসেব থেকে বাদ পড়েছি। আমার বাসায়ও কেউ আসেনি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক (অ:দা) মুহাম্মদ আতিকুল কবীর বলেন, আমরা শতভাগ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করেছি এবং শতভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ক্যাম্পেইন শেষের দিকে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি এবং হট লাইন নাম্বারে কল দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। মানুষ হটলাইন নাম্বারে কল দিতে জানিয়েছেন। আমরা তথ্য যাচাই-বাচাই করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছি।
প্রসঙ্গত- গত ২৭ জুলাই পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় বিবিএস-এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজার ৪২৬ জন। যা ২০১১ সালে ছিল ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩৭ জন। আর সিলেট জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ লাখ ৯৪ হাজার ২৩২ জন, নারী ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪ জন এবং হিজড়া ২৮৪ জন। বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করেন। এ জেলায় খানার সংখ্যা ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭। প্রতি বর্গমিটারে এক হাজার ১১৭ জন বাস করেন। ২০১১ সালে জেলায় খানার সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮১। ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গমিটারে ৯৯৫ জন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র তথ্য অনুযায়ী- স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত দেশে পাঁচটি আদমশুমারি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম, ১৯৮১ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে তৃতীয়, ২০০১ সালে চতুর্থ এবং ২০১১ সালে পঞ্চম আদমশুমারি হয়। ২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। ১০ বছর পর পর শুমারি হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান আইনের মাধ্যমে আদমশুমারি শব্দটিকে পরিবর্তন করে জনশুমারি করা হয়। আগের প্রতিটি শুমারি হয়েছিল জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। এবারই প্রথম বর্ষাকালে জনশুমারি হচ্ছে।
শুমারির জন্য প্রথম সময় নির্ধারণ করা হয় গত বছরের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে পিছিয়ে ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর ও পরে ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ট্যাব কেনাকাটার জটিলতার কারণে তৃতীয় দফার সময় পিছিয়ে ১৫ থেকে ২১ জুন সময় ঠিক করা হয়। এবার শুমারিতে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গণনাকারী ও ৬৩ হাজার সুপারভাইজার তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
সূত্র: সিলেটভিউ২৪