Logo

এখানেই সাংবাদিকতার স্বার্থকতা, এটাই প্রাপ্তি…জয় হোক শ্যামাদের…

নিজামুল হক বিপুল / ১৬৯
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০২২
NIZAMUL HAQUE BIPUL

কিছু কিছ কাজ সত্যি সত্যিই আনন্দ দেয়। সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত তিন দশক। দীর্ঘ এই পথ চলায় বহু বহু রিপোর্ট করেছি। একেবারে মফস্বল থেকে শুরু করে এই চাকচিক্যের শহরে, হরেক রকম মানুষের ভিড়ে নিজেকে নিজের কাজের প্রতি শতভাগ সমর্পিত করে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি সেখানেই পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছি। নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি।

দীর্ঘ পথ চলায় রিপোর্ট লেখার মধ্য দিয়ে হয়ত কখনও কখনও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, কখনও বা পারিনি। কখনো মানুষের উপকার হয়েছে আবার কখনো হয়তো রিপোর্টে কোনো কাজই হয়নি।
মূল ধারার প্রিন্টিং মাধ্যম (সংবাদপত্র) ছেড়ে যোগ দিয়েছি অনলাইন মাল্টিমিডিয়া ঢাকাপ্রকাশ-এ। প্রায় এক বছর ছুঁই ছুঁই । এই সময়ে অনেকগুলো রিপোর্ট করেছি। কোনো কোনো রিপোর্টের ফিডব্যাক পেয়েছি দ্রুততার সঙ্গে আবার কোনো কোনো রিপোর্টে হয়তো তেমন সাড়া পাইনি।

সর্বশেষ একটি রিপোর্ট আমাকে সত্যি সত্যিই ভীষণ আনন্দ দিয়েছে। এখানেই কাজের আনন্দ। শুধু আনন্দ নয়, দায়িত্বও বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। একটি সংবাদ যে একজন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কতটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখে তা আরেকবার প্রমাণিত হল।

বলছিলাম শ্যামা সাহা সেন-এর কথা। এই তরুণী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী চাকরি ছেড়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বুস্ট এডুকেশন সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান তাকে প্রাপ্য ছুটি না দিয়ে চাকরি থেকেই বাদ দিয়ে দেয়।
এ নিয়ে শ্যামা সাহা নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটা আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে। বিষয়টি আমার নজরে আনেন বন্ধুপ্রতীম শরিফুল ইসলাম পলাশ। একটা স্ক্রিনশট পাঠিয়ে পলাশ বলেন, ভাই বিষয়টা আপনি দেখতে পারেন। একটা রিপোর্ট করা যায় কি না।

তারপর বিষয়টি নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা চিন্তা করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম রিপোর্ট করার। কিন্তু যখন রিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন দেখি, শ্যামার স্ট্যাটাস আর তার ওয়ালে দেখা যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে পলাশের সঙ্গে কথা বলি। সে জানাল, ভাই অনেক চাপে আছে। তাকে স্ট্যাটাস তুলে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে সে স্ট্যাটাসটি শুধু ‘অনলি ফ্রেন্ড’ করে রেখেছে। আপনি নিশ্চিন্তে রিপোর্ট করতে পারেন।

তারপর প্রধান সম্পাদক মোস্তফা কামাল ভাইয়ের সঙ্গে শেয়ার করতেই তিনি বললেন, রিপোর্ট করে দেও। সঙ্গে সঙ্গেই ‘পূজায় ছুটি চাওয়ায় চাকরি হারালেন শ্যামা!’শিরোনামে রিপোর্টটি আপ হল ঢাকাপ্রকাশ-এ।

 

তারপর থেকেই যেন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করল। বুস্ট অফিস থেকে প্রতিষ্ঠানটির সিইও লন্ডন থেকে শ্যামার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে চাকরি ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন। অন্যদিকে বুস্ট এর ঢাকা অফিস থেকে ঢাকাপ্রকাশ-এ ফোন করে রিপোর্ট প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়। আর প্রতিষ্ঠানটির সিইও ঢাকাপ্রকাশ-এ প্রকাশিত রিপোর্ট এর নিচে কমেন্ট করে বলেন, ঢাকাপ্রকাশ এর বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

কিন্তু দেরিতে হলেও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে বুস্ট এডুকেশন কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত তারা শ্যামা সাহা সেনকে চাকরি ফেরত দিয়েছে আট দিনের মাথায়। শুধু ফেরত নয়, স্থায়ী করে নিয়েছে তাকে। আজই (১০অক্টোবর) সোমবার শ্যামা তার নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন।

এটাই হচ্ছে সংবাদ প্রকাশের স্বার্থকতা। এখানেই সাংবাদিকতার স্বার্থকথা।
এই দীর্ঘ পথচলায় এরকম বহু ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছি। রিপোর্ট প্রকাশের কারণে বহু লোক ন্যায় বিচার পেয়েছে, তার অধিকার ফেরত পেয়েছে।

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই সফলতাই পেশাগত জীবনের বড় পাওয়া।

 

লেখক: সাংবাদিক


আরও পড়ুন
Theme Created By ThemesDealer.Com
© অনুমতি ছাড়া কপি করবেন না। কপি না করে নিজে লিখুন।
© অনুমতি ছাড়া কপি করবেন না। কপি না করে নিজে লিখুন।