রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের মেদিনীমহল গ্রামের তছকির মিয়া (৮০) একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। বয়স বাড়ার কারণে আগের মতো শরীরে শক্তি না থাকায় কাজ করতে তাকে কেউ আর ডাকে না। তাই ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ ৭ জনের সংসার চালাতে বাধ্য হয়েই ২০ বছর আগে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিতে হয় তাকে। দুই মেয়েকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। এখন বয়সের কারণে আগের মতো ভিক্ষার জন্য যেতে পারেন না বলে আয়ও কমে গেছে।
একই অবস্থা টেংরা ইউনিয়নের মখলিছ মিয়ার (৭০)। ভাগ্যদোষে ১৫ বছর ধরে ভিক্ষা করছেন পথেপথে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর ঘড়গাঁও গ্রামের লালমতি বিবি (৫৫) প্রায় ১০ বছর আগে স্বামী হারানোর পর ৫ মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকতে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। দুঃখ-দুর্দশায় ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বয়স বাড়ায় এখন আর সংসারের ঘানি টানতে পারছেন না। তাদের মতো পরিস্থিতিতে পরে এই পথ বেছে নিয়েছেন এমন ১১ জন এখন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাইছেন।
তাদেরকে পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ১১টি ভ্যানগাড়ি, দোকানের জন্য মালামাল ও নগদ ৫ হাজার টাকা করে প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে। রাজনগর উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে তাদের হাতে এসব ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ তুলে দেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পালের সভাপতিত্বে এসময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান খান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা আক্তার, রাজনগর থানার ওসি বিনয় ভূষন রায়, মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখত, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তি চক্রবর্তী, সমাজসেবা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান, টেংরা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু খান, ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ, পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে মর্যাদা নিয়ে স্বাবলম্বী জীবনযাপন করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন ১১ জন অসহায় মানুষ।
এসময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের বিশেষ এলাকার উন্নয়ন সহায়তা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১০ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ছাত্রীর মাঝে বাইসাইকেলও বিতরণ করা হয়।