ধানের চারা হলুদ হতে শুরু করেছে বীজতলায়। এত দিনে চারা রোপণ শেষ হওয়ার কথা। চাষিরা ব্যাস্ত থাকার কথা বোরো ধানের জমিতে। কিন্তু পানি না থাকায় জমিতে এখনো হাল চাষ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সারা বছরে একবার ঘরে ফসল তোলা হয়। তার উপরই জীবন-জীবিকা তাদের। কিন্তু এবার সেই আশাও দেখছেন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সোনাটিকি, সুপ্রাকান্দি ও গোবিন্দপুর এলাকার প্রায় ১ হাজার কৃষক।

পানি না পাওয়ায় প্রায় ২ হাজার একর জমি অনাবধি পড়ে রয়েছে। শাখাখালে পানির প্রবাহ কম থাকায় গত কয়েকবছর ধরে এ এলাকার কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। স্থায়ী কোনো সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। প্রতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশ্বাস মিলে কিন্তু পানি মিলে না বলে জানান এই এলাকার কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সোনাটিকি, সুপ্রাকান্দি, জালাই, ছত্রিসের বন্দ, মাঝের কান্দি, আলাইর ডুগরা, জোয়ালভাঙ্গা কান্দি, বৈরাগির বন্দ, আলগরা, খলখলির বান্ধ, বুড়িঝুড়িপাড় বন্দের প্রায় ২ হাজার একর জমিতে পানি নেই। ট্রাক্টর পড়ে রয়েছে জমিতে। কৃষকরা পানি পেলে জমিতে চাষ দিবেন এই আশায় বসে আছেন। বীজতলায় চারাগুলোর কোনোটির বয়স দেড়মাস আবার কোনোটি আর রোপনযোগ্য নয়। চারার সবুজ পাতা হলুদ হতে শুরু করেছে। তাই উপায় না দেখে কেউ কেউ চারা কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। জমির সাথে যে সংযোগ নালা রয়েছে তার থেকে অন্তত ১-২ফুট নিচ দিয়ে শাখাখালের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অথচ এই পানি জমির নালা দিয়ে প্রবেশ করার কথা। খালের পাশে যাদের জমি তারা সেচ দিয়ে পানি তুলে ১-২ বিঘা জমি চাষ করছেন। পুরো মাঠ পড়ে আছে শূন্য। কয়েকজন কৃষক গুইর বন্দ ও ইলামের কান্দির বিলে ধান লাগিয়েছেন। সেখানেও পানির অভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে।

কথা হয় সুপ্রাকান্দি গ্রামের কৃষক সৈয়দ জুলফিকার আলী, তাজুল ইসলাম, খালিছ মিয়া, দুরুদ মিয়া, সৈয়দ মিজান আলী ও সোনাটিকি গ্রামের উজ্জল মিয়ার সাথে। তারা জানান, বছরে একবার তারা ধান চাষের সুযোগ পান। সেই ফসলেই তাদের সংসার চলে, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। গত কয়েকবছর ধরে শাখাখাল দিয়ে পানির প্রবাহ কম থাকায় ধান চাষ করতে পারছেন না। এক সপ্তাহ ঠিকমতো পানি পেলে আপাতত ধান চাষ করা যাবে। পানির জন্য প্রত্যেক বছর ধর্ণা দেন পাউবো অফিসে। তাদের আশ্বাসাইে সার। সময়মতো পানি চাইলে পানি পাওয়া যায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকরা।
সোনাটিকি হয়ে ফতেপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের দিকে গেছে এই শাখাখালটি। ওই এলাকার কৃষকরা শুরুতেই চাতলা বিল, বষিবিল, সিংগুয়া বিলের পানি সেচ দিয়ে ধান চাষ করেছেন। এখন বিল শুকিয়ে যাওয়ায় পানি পাচ্ছেন না। শাখাখালে পানি না থাকায় জমি ফাটতে শুরু করেছে। ধান গাছ শুকোতে শুরু করেছে কোথাও কোথাও। পানি না পেলে পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে বলে দাবি এ এলাকার চাষিদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ৪৫ দিনের মধ্যে চারা রোপন না করতে পারলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পানি ছাড়ার বিষয়টি আসলে পাউবো’র নিয়ন্ত্রণে। আমরা কৃষকের সমস্যার কথা তাদেরকে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। সুইচগেইটগুলো খুলে দিয়ে আসার পর উজানের কৃষকরা শুধু নিজেদের স্বার্থ চিন্তা করে আবার সেগুলো বন্ধ করে দেয়। ফলে ভাটির দিকে পানি কম যায়। আমার জনবল সংকট রয়েছে। প্রত্যেক গেইটে একজন করে রাখা সম্ভব নয়। কৃষকরা সহযোগিতা না করলে ৫-৬ জন মানুষ দিয়ে প্রায় ৩’শ সুইচগেইটের তদারকি অসম্ভব। আশা করছি সমস্যাটি দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।