গরু চুরি করে জবাই করে গোস্ত সাপ্লাই দেয়াই ছিল তার পেশা। নিজের ঘরের ভিতরেই বানিয়েছেন ‘মিনি কসাই খানা’। রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলার জন্য আছে ড্রেনেজ সিস্টেমও। ঘরেই ভিতরে গোস্ত মজুদের জন্য রয়েছে ডিপফ্রিজও।
গরু চুরি ও বিভিন্ন কসাইদের কাছে গোস্ত সাপ্লাই দিতেন সকলের অগোচরে। ধরা পরার আগপর্যন্ত অন্তত শতাধিক গরু চুরির রেকর্ড করেছেন রাজনগর থানার পুলিশের হাতে আটক ফেঞ্চুগঞ্জের মির্জাপুর গ্রামের ওয়াদুদ মিয়া (৩৫)। অপশেষে অসংখ্য গরুর কাটা মাথা, হাড়গুড়, দুইটি গরু ও ফ্রিজে রাখা গরুর প্রায় ৫০ কেজি মাংসসহ পুলিশের হাতে ধরা পরেন তিনি। মঙ্গলবার বিকালে রাজনগর থানার পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এ শীত মৌসুমে প্রচুর গরু চুরি হয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত ছিলনা। এদিক গরু চোরদের ধরতে মরিয়া হয়েছিল পুলিশও। অধিকাংশ গরু চুরির রেকর্ড পুলিশের কাছে না থাকলেও সাধারণ মানুষরা নিজের মতো করে খোঁজাখোঁজি ও মেম্বার চেয়ারম্যানদের জানিয়ে রাখতেন। গত ৪/৫ দিন আগে উপজেলার মুন্সিবাজারের করিমপুর চা বাগানের অনন্ত তেলির একটি বাছুর ছাড়া গাভী চুরি হয়। তিনি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখোঁজি করছিলেন। এদিকে গত ২দিন আগে রাজনগরের চেলারচক এলাকার কয়েকজন শ্রমিক পার্শবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আনারস বাগানে কাজ করতে যান। তারা ওই বাগানে পা ও মুখ বাধা একটি গাভী দেখতে পেয়ে নিয়ে এসে উত্তরভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখেন। গাভীটির মালিক না পাওয়ায় এলাকায় মাইকিং করা হয়। খবর পেয়ে অনন্ত তেলি গিয়ে দেখেন গাভীটি তার। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে গাভীর বাছুর নিয়ে গেলে বাচ্চাটি দুধ খাওয়া শুরু করে। এতে তার মালিকানা নিশ্চিত হওয়া গেলেও চোর কে তা জানা যাচ্ছিল না।
অন্যদিকে মুন্সিবাজারের করিমপুরের আওয়াল মিয়াসহ কয়েকজনেরও গরু চুরি হয়েছে অতিসম্প্রতি। তারা চুর খোঁজার জন্য ওই এলাকায় যান। তারা ফেঞ্চুগঞ্জের মির্জাপুরে ওয়াদুদ মিয়ার বাড়ির পাশে অর্ধশতেরও বেশি গরুর মাথা ও হাড়গুড় দেখতে পান। এছাড়াও আনারস বাগানের বিভিন্ন এলাকায় গরুর মাথা ও হাড় পড়ে রয়েছে। পরে তারা রাজনগর থানার পুলিশকে খবর দিলে উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত মাসুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ফেঞ্চুগঞ্জ থানার সহায়তায় মির্জাপুর গ্রামের মজির মিয়ার ছেলে ওয়াদুদ মিয়া (৩২) ও তার পাশের বাড়ির বোনের জামাই মাসুদ মিয়ার ছেলে কবির মিয়া (৫৫) কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এসময় তার ঘরের ফ্রিজে রাখা প্রায় ৫০ কেজি মাংস, চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি অটোরিক্স, বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তার বাড়ির পাশ থেকে প্রায় ৫০টি গরুর মাথার কঙ্কাল পাওয়া যায়।
এব্যাপারে রাজনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, সে রাজনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক গরু চুরি করেছে বলে বুঝা যাচ্ছে। আমরা গরু চুরির সরঞ্জাম, সিএনজি, ২টি গরু, ৫০কেজি মাংসসহ তাকে আটক করেছি। পুরো চক্রকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।