Logo
সর্বশেষ :
ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড মিসবাহ ভেবে হত্যা করা হয় ‘আইনজীবী সুজনকে’ রাজনগরে ছাত্রদলের আয়োজনে ইফতার ও দোয়া মাহফিল রাজনগরে দারুল ক্বিরাত এবং বয়স্কদের সহীহ্ কুরআন প্রশিক্ষণের সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ কর্মচারীদের মধ্যে শিবিরের ঈদ সামগ্রী বিতরণ রাজনগরে গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে জামায়াতের ইফতার মাহফিল রাজনগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের আয়োজনে ক্বিরাত প্রতবযোগিতা রাজনগরে ডিবি পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ৪৭ জনের নামে মামলা জুড়ীতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল মসজিদ-মাদরাসায় পানির ফিল্টার দিল রাজনগর প্রবাসী ওয়েলফেয়ার সোসাইটি পর্তুগাল রাজনগরে ডিবি পুলিশকে আটকে পালালেন চেয়ারম্যান, উত্তেজনা

রাজনগরে অন্যের জমি ‘দখল’ করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতার ‘টর্চার সেল’!

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : / ১৬৫৫
প্রকাশিত : শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪

কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু। সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, তারই করা হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা তার মামার জমি দখল করে আব্দুর রকিব মন্টু সেখানে তৈরি করেছে তার ‘টর্চার সেল’। জানালা বিহীন প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ ও ৮ ফুট প্রস্থের এমন ৭টি ঘরের সন্ধান পাওয়া গেছে রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের পানিশাইল (নিজগাঁও) এলাকায়। স্থানীয়দের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গভীর রাতে কালো রঙের গাড়িতে করে লোকজন নিয়ে আসতেন মন্টু। চলে যেতেন ভোররাতে।

সরেজমিনে উত্তরভাগ ইউনিয়নের পানিশাইল (নিজগাঁও) এলাকায় গিয়ে জানা যায়, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রকিব মন্টু রাজনগরের পানিশাইল (নিজগাঁও) গ্রামে নিজের ও দখলকৃত সম্পত্তিতে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছের বাগান। সেখানে নিজের জমি ২ একর ৭শতাংশ থাকলেও অন্যদের জমি দখল করে ভোগ করছেন মোট ২ একর ৪৭ শতাংশ। অভিযোগ রয়েছে, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল থাকাকালে বসতবাড়িসহ পাশের সব জমি কেড়ে নিতে কেয়ারটেকারকে দিয়ে একের পর এক মামলা দিয়েছেন তারই মামা পাশের জমির মালিক নুরুল ইসলাম কলা মিয়া (৮৩) ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা না পাওয়ায় তা আর নিতে পাড়েন নি।

নিজের মামা কলা মিয়াকে জেলে পাঠিয়ে এই বাড়িটি দখলে নেন অ্যাডভোকেট মন্টু

গত ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর রাতের আধাঁরে নিজগাঁও কমিউিনিটি ক্লিনিকের পাশে আব্দুর রকিব মন্টুর সম্পত্তির কেয়ারটেকার আব্দুল মালেককে হত্যা করে ফেলে যায় দুবৃত্তরা। পরে ওই রাতেই বসতঘর থেকে পুলিশ গিয়ে নুরুল ইসলাম কলা মিয়া ও তার পরিবারের সব সদস্যদের ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বাদী হয়ে রাজনগর থানায় ওই পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কলা মিয়ার নাতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আজিজুর রহমান প্রান্তকেও গ্রেফতার করা হয় একই মামলায়। কলা মিয়ার পরিবারের সবাই কারাগারে থাকার সুযোগে তার বসতঘরসহ সব জমি দখলে নেন মন্টু। পরে কলা মিয়ার বসতঘরসহ নিজের জমির সামনের দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মান করেন। বাড়ির নাম দেন ‘বশির-রাবেয়া কটেজ’। ওই সীমানা প্রাচীরের ভেতরে নির্মান করেছেন একচালা টিনের আধাপাকা ৭টি আলাদা আলাদা ঘর। প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের রহস্যজনক এসব ঘরে নেই কোনো জানালা। স্থানীয়রা বলেছেন, দিনের বেলায় কখনো এসব ঘর খুলতে দেখেন নি। তবে গভীর রাতে আব্দুর রকিব মন্টু লোকজন নিয়ে কালো রঙের গাড়িতে করে এখানে আসতেন আবার ভোররাতের দিকে বেরিয়ে যেতেন। তাকে স্থানীয়রা এতোটাই ভয় পেতেন যে প্রাচীরের ভিতরে যাওয়ার সাহস করতেন না।

 

পানিশাইল গ্রামের নান্নু মিয়া বলেন, আমরা ছোট থেকে দেখে আসছি কলা মিয়া এই বাড়িতে বসবাস করছেন। আমাদের এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জেলে থাকার সময় মন্টু মিয়া তার বাড়ি ও জমিজমা দখল করে জানালা বিহীন আরো ৭টি ছোট ঘর বানিয়েছে। রাতের বেলায় এসব ঘরে মন্টু ও তার লোকজন আসতো। গ্রামবাসী মন্টুর ভয়ে এখানে আসতো না। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের ‘টর্চার সেল’ আয়নাঘরের মতো ব্যবহার করতো। এসব ঘর ভেঙ্গে দেখা দরকার তারা এখানে কি করতো।

 

প্রায় আড়াই বছর পর চলতি বছরের জুন মাসে হত্যা মামলা থেকে জামিনে বের হয়ে কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা দেখেন বসতঘরসহ প্রায় ৪০ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন মন্টু। তাদের রেখে যাওয়া বড় বড় গাছগুলো কেটে নেওয়া হয়েছে। কলা মিয়ার জমিতে গড়ে তুলেছেন গাছের বাগান ও ঘর। মন্টু সীমানা প্রাচীরের ভিতরে তার জমিও ঢুকিয়ে নিয়েছেন।

 

ওই গ্রামের মানিক মিয়া বলেন, এখানে নিজের ঘরে থেকে কলা মিয়া তার মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। তাদের ঘরে নাতি-নাতনি পেয়েছেন। তার জমির দলিল ও কাগজপত্র রয়েছে। তবুও তার ঘরে থাকতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে অ্যাডভোকেট মন্টু। কলা মিয়া যদি মার্ডার করে থাকেনও তাতে তার জমি ও বসতঘর মন্টুর হয়ে যেতে পারে না।

 

নুরুল ইসলাম কলা মিয়া বলেন, আমি ৭০ বছর এই বাড়িতে থাকছি। আমার বোন ও বোনের ছেলেরা আমাকে স্থায়ীভাবে থাকতে এসব জমি আমার কাছে বিক্রি করেছেন বলে লিখে দিয়েছেন। সকল কাগজপত্র আমার থাকার পরও এই জমি কেড়ে নিতে বারবার মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করেছে মন্টু। পরে আর উপায় না পেয়ে সে নিজেই তার কেয়ারটেকারকে হত্যা করিয়ে আমার পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে। প্রায় আড়াই বছর জেল খেটেছি। আমার বিবাহযোগ্য কলেজে পড়ুয়া মেয়েও মামলা থেকে বাদ যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নাতিটাকেও ছাড়েনি। এখন জামিনে এসে নিজের ভিটায় প্রবেশ করতে পারছি না। এখনো পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কলা মিয়া।

 

কলা মিয়ার নাতি আজিজুর রহমান প্রান্ত বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। মন্টুর করা মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকায় অনুপস্থিতির কারণে বিশ্বদ্যিালয় আমার ছাত্রত্ব বাতিল করেছে। আমার ছোট খালামনি এইচএসসিতে পড়তো তাকেও জেলে নেওয়া হয়েছে। বিদেশে থাকা আমার এক মামাকেও আসামী করা হয়েছে। পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এই মন্টু। ৮৩ বছরের বৃদ্ধ নানা অসহায়ের মতো অন্যত্র ভাড়া থাকছেন ৩ মাস ধরে। এখন গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় আমরা বাড়িতে উঠেছি। কিন্তু পুলিশ নানাকে ঘরে ঢুকতে নিষেধ করছে।

 

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টুর মুঠোফোনে (০১৭১৬২০৮৯২০) একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. মুবাশ্বির বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধের পরিবারকে ঘরে থাকতে বাঁধা দেয়া হবে না। জমি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে আদালতে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। বৃদ্ধের ঘরে প্রবেশ করা নিয়ে একজন অভিযোগ করেছিলেন। আমরা বলে দিয়েছি এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবো না। টর্চার সেল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি শুনেছি। এ বিষয়টি গভীরভাবে আমরা তদন্ত করে দেখবো।


আরও পড়ুন
Theme Created By ThemesDealer.Com
© অনুমতি ছাড়া কপি করবেন না। কপি না করে নিজে লিখুন।
© অনুমতি ছাড়া কপি করবেন না। কপি না করে নিজে লিখুন।