মৌলভীবাজারের রাজনগরে জমিজমা ও পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের উপর হামলা ও পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। হামলায় আহতরা রাজনগর থানায় মামলা করলেও আসামীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে জানান ভূক্তভোগীরা। হামলার শিকার পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী সোমবার দুপুরে রাজনগর প্রেসক্লাবে ওই ইউপি সদস্যের বিরোদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ সমর্থক ছায়েজ আলীর কাছে একই ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মঈন উদ্দিনের ছেলে নূর মোহাম্মদ তিন লাখ টাকা পাওনা ছিলেন। পরবর্তীতে জমিজমা নিয়েও উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে সামাজিক বিচার-সালিশে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা। গত ১৫ নভেম্বর রাতে সালিশ বৈঠকে ইউপি সদস্য ছায়েজ আলীর লোকজন উপস্থিত না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে থাকে। ওই রাত আড়াইটার দিকে নূর মোহাম্মদকে ইসলামপুর গ্রামের ওয়াবদা বাধেঁর পাশে তার চাচাতো ভাইয়ের দোকান থেকে ইউপি সদস্য ছায়েজ আলী লোকজন নিয়ে তুলে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে ছায়েজ আলীর ভাই ময়ুব আলীর ঘর থেকে উদ্ধার করে বলে লিখিত বক্তব্যে নূর মোহাম্মদ জানান। ওই রাত ৪টার দিকে পুলিশ নূর মোহাম্মদকে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিলে বাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তার উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ইউপি সদস্য ছায়েজ আলীসহ তার সাথে থাকা লোকজন। এতে গুরুতর আহত হন ইসলামপুর গ্রামের মৃত রইছ উদ্দিনের ছেলে হেলাল মিয়া (৪৫), লিটন মিয়া (৩২), জাপির উদ্দিনের ছেলে সায়েদ মিয়া (২৮), শামিম মিয়া (৩০), মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে অনু মিয়া (২৬), মৃত আপ্তাব উদ্দিনের ছেলে জিলাল মিয়া (৬০), খাজা উদ্দিন (৫৫)। এঘটনায় রাজনগর থানায় গত ২০ নভেম্বর মামলা দায়ের করলেও পুলিশ আসামী ধরতে কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নূর মোহাম্মদ বলেন, ২০ তারিখে মামলা করার পর থেকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্চে তারা। আমরা তাদের হামলার ভয়ে বাড়িতে যেতে পারছি না। আমাদের মাথা, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। আমাদের রক্তাক্ত জখম করার পরও তারা রাজনগর থানায় আমাদের বিরোদ্ধে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। রাজনগর থানায় আসামীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করা হলেও আসামীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামপুর গ্রামের সামছুল ইসলাম, মঈন উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, জয়নাল মিয়া প্রমুখ।
অভিযুক্ত ছায়েজ আলী বলেন, পাওনা টাকা ও জমি নিয়ে নিয়ে বিরোধের ঘটনা সাজানো। মূলত দেওয়ান শামিম আফজালের ওয়াকফ করা সম্পত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপুর এলাকার ১৫০-২০০ জন মানুষ বসবাস করে আসছে। নূর মোহাম্মদসহ কয়েকজন মিলে তাদেরকে উচ্ছেদ করে এই জমি দখলে নিতে চায়। জাল কাগজপত্র বানিয়ে বিভিন্নভাবে তারা হয়রানি করে আসছে। আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতে বললে তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। নূর মোহাম্মদের বাড়ি আমার বাড়ির পাশেই। ১৫ তারিখ রাতে আমরা ঘুমে ছিলাম। সকালে শুনি আমার উঠান থেকে পুলিশ নূর মোহাম্মদকে উদ্ধার করেছে ও পরে রাস্তায় তাদের কয়েকজনকে মারধর করেছে। আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে চাইছে তারা।
এব্যাপারে রাজনগর থানাও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ মোবাশ্বির বলেন, ঘটনার দিন নূর মোহাম্মদকে পুলিশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উভয়পক্ষে আহত রয়েছে এবং হামলার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলার আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আসামী ধরতে পুলিশের কোনো অবহেলা নেই।