মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় জামায়াত নেতার উপর ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ’ নেতার হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় জামায়াতের রাজনগর উপজেলার এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী শেখ মো. শাহাব উদ্দিন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে আহত শাহাবুদ্দিন রাজনগর থানায় মামলা করেছেন। তবে এখনো পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে নেপথ্য কারণ হিসেবে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ভিসা নিয়েে এজেন্সির সাথে লেনদেনে সালিশ হওয়া থেকে ক্ষুব্দ হয়ে এই হামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের নিদনপুর গ্রামের শামা লন্ডনীর বাড়ির সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
ওইদিন রাতে হামলার শিকার শেখ মো. শাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে রাজনগর উপজেলার মেদিনীমহল গ্রামের আব্দুল মালেক এর ছেলে রাজু মিয়া (২৫), রাজুর পিতা আব্দুল মালেক (৬০), মতিন সরকারের ছেলে বাবুল মিয়া (৩০), মস্তাব মিয়ার ছেলে ছাবুল মিয়া (২৫) সহ অজ্ঞাত আরো ১০ জনকে আসামী করেছেন। এদের মধ্যে রাজু মিয়ার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় করা একটি মামলার (জিআর ২২৯/২৪ (সদর)) এজহার নামীয় ৪৮ নম্বর আসামী। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জাতীয় নাগরিক কমিটিতে প্রতিনিধি হিসেবে রাজুকে রাখা হয়েছে।
মামলার এজহার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, শেখ মো. শাহাব উদ্দিন ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ‘ছাত্রলীগ নেতা’ রাজুসহ অভিযুক্তরা তার উপর আক্রমণ করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এসময় তারা ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করার চেষ্টা করলে শাহাবুদ্দিন ও তার সাথে থাকা মজিদ আলীকে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে ছুরি ও রড দিয়ে মেরে জখম করে। এসময় শাহাবুদ্দিনের মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। পরে তাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজু মিয়া যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য মৌলভীবাজার শহরের আর কে গ্লোবাল এডুকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. মুরাদ আলমের কাছে ৩০ লাখ টাকা দেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক মুরাদ আলমের সাথে লেনদেন সংক্রান্ত চুক্তিপত্র ও তার ব্যাক্তিগত একাউন্টে টাকা লেনদেন করেন রাজু। সেই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতেন জহিরুল ইসলাম জুবেল নামে মেদিনীমহল এলাকার এক ব্যাক্তি। দীর্ঘদিন ধরে ভিসা না হওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উদ্ধার করতে গিয়েও উদ্ধার করতে পারছেন না রাজু ও তার পরিবার। প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পেরে তারা ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী জহিরুল ইসলাম জুবেলকে টাকা ফেরত দিতে চাপ দিতে থাকে। জুবেল ও তার পরিবার বার বার চুক্তিপত্র ও লেনদেন যার সাথে হয়েছে তার সাথে কথা বলতে রাজুকে বলে আসছেন। তবে রাজু তা মানতে রাজি হননি। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সালিশ পর্যন্ত গড়ালে জামায়াত নেতা শাহাবুদ্দিনসহ কয়েকজন বিষয়টি মিমাংসার জন্য উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেন। সালিশে উপস্থিত ব্যাক্তিরা ওই প্রতিষ্টানের মালিকের কাছে টাকা চাইতে রাজুকে পরামর্শ দিলে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় জুবেলের সাথে লেনদেনের কোনো প্রমাণ রাজুর কাছে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তার ক্ষোভ ছিল।
অভিযুক্ত রাজু মিয়া বলেন, আমার এলাকার জহিরুল ইসলাম জুবেল নামের একজনকে ইউকের ভিসার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা দেই। পরবর্তীতে জহিরুল ইসলাম জুবেল টাকা না দিয়ে নেপাল চলে যায়। এবিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগে জুবেলের বাড়িতে শালিস বসে। এসময় শেখ মো. শাহাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উনার সাথে আমার কথা-কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে আমি উনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করি। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমার বাবা শাহাব উদ্দিনের মোটরসাইকেল আটকিয়ে জানতে চান আমার টাকা দিতে উনি বাধা প্রদান করেন কেন। এনিয়ে আমার বাবার সাথে কথা-কাটাকাটি হয়। স্থানীয়রা এটা সমাধান করে দেন। কিছু সময় পরে শাহাব উদ্দিনের মামাতো ভাই হাতুড়ি নিয়ে এসে মারধর করেন। তখন আমাকে ফোন দিলে আমিও ঘটনাস্থলে যাই। স্থানীয়রা মজিদকে মারধর করেন। ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনীতিক দলের সাথে কখনও সম্পৃক্ত ছিলাম না।
রাজনগর উপজেলা জামায়াতের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী শেখ মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, মোটরসাইকেলে বাড়ি থেকে মৌলভীবাজার শহরে যাওয়ার সময় মেদিনীমহল গ্রামের রাজুসহ ১০-১২ জন নিদনপুর এলাকায় আমার উপর হামলা করে। এসময় আমি ও আমার সাথে থাকা মজিদ আলী আহত হই। এলাকায় সে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো।
মৌলভীবাজার জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি ফাহাদ আলম বলেন, সে আগে ছাত্রলীগ করতো। গত জুলাই মাস থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। সদর উপজেলার জাতীয় নাগরিক কমিটিতে সে প্রতিনিধি হিসেবে আছে। তবে নাগরিক কমিটির হোক বা যে দলেরই হোক এভাবে কারো উপর হামলা করার বিষয়টি ঠিক হয়নি। আমি এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবো।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদুল হাসান খান মামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এবিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। আমরা গতকাল রাতে আসামীকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু আসামীকে পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেফতারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে।