বড়লেখায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নামায় বন্যার ভয়াবহতার চিহ্ন বেরিয়ে আসে। বন্যার পানির তোড়ে এগুলোর বিভিন্ন অংশের পিচ ও পাথর সরে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্তের। কোন কোন সড়ক পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় সড়কে চলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসী ও যানবাহন চালকদের।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় এলজিইডি’র অধীনে থাকা উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কের মধ্যে ৩০টি এবং ১৫টি গ্রামীণসহ ৪৫টি সড়কের বিভিন্ন অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ প্রায় ১০০ কিলোমিটার। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কগুলো হচ্ছে দাসেরবাজার-ফকিরবাজার সড়ক, বড়লেখা আরএইচডি চৌমুহনী-হাকালুকি হাওর ভায়া কানুনগোবাজার জিসি সড়ক, তালিমপুর আরএইচডি আজিমগঞ্জ জিসি ভায়া তালিমপুর ইউপি অফিস সড়ক, আরএইচডি বরইতলি-বড়লেখা জিসি ভায়া মুছেগুল হিনাইনগর সড়ক, রতুলী আরএইচডি আজিমগঞ্জ জিসি সড়ক, কালীবাড়িবাজার-নিজবাহাদুরপুর ইউপি অফিস সড়ক, নিজবাহাদুরপুর ইউপি অফিস ভায়া ইটাউরি-বিহাইডর সড়ক, সুজাউল ভায়া পকুয়া সুনাই নদী সড়ক, সুজাউল-ভাগল-চরিয়া-দৌলতপুর সড়ক, দক্ষিণভাগ আরেঙ্গাবাদ-রাঙাউটি রাস্তা, দক্ষিণভাগ কামিলপুর-আজিমগঞ্জ রাস্তা, দাসেরবাজার ইউপি অফিস-সুড়িকান্দি সড়ক, দাসেরবাজার-বর্ণি ইউপি (ফকিরবাজার জিসি) ভায়া গোডাউনবাজার সড়ক, শাহবাজপুর ইউপি অফিস-পাল্লারথলবাজার সড়ক, বর্ণি ইউপি অফিস (ফকিরবাজার) মনারাই-মনাদিবাজার সড়ক, বর্ণি ইউপি অফিস ভায়া ঈদগাহবাজার ভায়া আহমদপুর-মুদৎপুর সড়ক, কাঠালতলী বাজার-তেরাকুড়ি-সুজানগর ইউপি অফিস সড়ক, বর্ণি ইউপি অফিস-নয়াবাজার ভায়া মিহারী সড়ক, রতুলী-লক্ষীছড়া সড়ক, অজমির ছোটলেখা-দক্ষিণভাগ সড়ক, বিছরাবাজার-মাইজগ্রাম সড়ক, সৎপুর-কাজিরবন্দ সড়ক, দাসেরবাজার আরএইচডি বাদেজঙ্গল ভায়া দাসেরবাজার কলেজ সড়ক, আরএইচডি উত্তর চৌমুহনী-বালিছড়া সড়ক, শিমুলিয়া-তেড়াকুড়ি ভায়া সহিদাবাদ-শেওরাডিগা সড়ক, আজিমগঞ্জ-রফিনগর সড়ক, আরএইচডি তারাদরম-বড়থল সড়ক, আরএইচডি সফরপুর সড়ক, আরএইচডি সুজানগর ইউপি অফিস-সুজানগর পাথারিয়া কলেজ সড়ক, দাসেরবাজার-খোজার মসজিদ সড়ক ও তালিমপুর আরএইচডি বালিরবিন সড়ক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আরএইচডি বরইতলি-বড়লেখা জিসি ভায়া মুছেগুল হিনাইনগর সড়কের দক্ষিণ হিনাইনগর (বালিছড়া) এলাকার সড়কে প্রায় ১০০ ফুট অংশ পাহাড়ি ঢলে ভেঙেছে। এই জায়গায় এলাকাবাসী সাঁকো নির্মাণ করে পারাপার হচ্ছেন।
অন্যদিকে দাসেরবাজার-ফকিরবাজার সড়কের বিভিন্ন অংশে বন্যায় পিচ ও পাথর সরে গেছে। এতে তৈরি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। দাসেরবাজার-ফকিরবাজার সড়কের মতো অন্যগুলোর অবস্থা একই রকম। দক্ষিণভাগ-কামিলপুর ভায়া আজিমগঞ্জ সড়কের পিচ উঠে যাওয়াসহ বন্যার পানির তোড়ে এ সড়কের একটি কালভার্ট উপড়ে গেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী প্রীতম সিকদার জয় জানান, উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নের রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে বর্নি, সুজানগর ও তালিমপুর ইউনিয়নের শতভাগ রাস্তা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পানি নামায় রাস্তাগুলোর ক্ষত বেরিয়ে আসছে। অনেক গ্রামীণ সড়কে এখনো পানি রয়েছে। আমরা সরেজমিনে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা তৈরি করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠিয়েছি। উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণসহ প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে তা শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।