ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করে ২৯ বছর পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক রিতু কুন্ডু। তবে এবার নিজের নাম পরিবর্তন করে ইসলামিক নাম ‘আয়শা জাহান’ রাখেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা কোর্টের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় তিনি তার নাম পরিবর্তন করেন। এরআগে, গত সোমবার তিনি নাম পরিবর্তনের জন্য নোটারি পাবলিক করেন।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আয়শা জাহান (বর্তমান নাম) বলেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নিজের নাম ইসলামিক নামে রাখার সিদ্ধান্ত নিই। আয়শা জাহান নাম রাখার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। গুগলে ইসলামিক নাম সার্চ দিলে সবার প্রথমেই আয়শা নাম দেখায়। বারবারই এমন আসে। তখন ভাবি আল্লাহ তাআলা হয়তো এই নামেই কবুল করেছেন। এছাড়া হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুখে সর্বাধিক উচ্চারিত নাম তার প্রিয় সহধর্মিণী আয়শা (রাঃ)। এছাড়া এই নাম রাখার মাধ্যমে আমি যতদিন বাঁচব ততদিন হযরত আয়শা (রাঃ) এর নাম উচ্চারিত থাকবে বলে আমি মনে করি। অন্যদিকে জাহান আমার ছেলের নাম।
আমার ছেলের পরিচয়ও আমার নামে রাখা হয়েছে।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর কোন প্রতিবন্ধকতা এসেছে কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেন, পরিবারের চেয়ে যতটা এসেছে, তারচেয়ে বাইরে থেকে সামাজিকভাবে বেশি প্রতিবন্ধকতা এসেছে। অনেকে হুমকি ধামকি ও কটূক্তি করেছে। এগুলো কাটিয়ে উঠা যায় না। এখনো সহ্য করে যাচ্ছি। অনেকে আমার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়ে মনগড়া কারণ দিতো। তাই বাধ্য হয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখ খুলি। পড়াশুনা করে ইসলামের বিধানসমূহ ভালোবেসেই আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। কোন ব্যক্তিগত কারণ থেকে নয়। এরপর রিপোর্ট মেরে আমার ফেসবুক আইডি নষ্ট করে দেয়া হয়।
এরআগে, গত বছরের ১৮ই ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা জানান রিতু কুন্ডু (বর্তমানে আয়শা জাহান)। ভাইরাল সেই ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৯ বছর পর্যন্ত আমি নিজের পরিবার, সমাজ ও মানুষের আচার-ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করি। এ দীর্ঘ সময় হিন্দু ধর্মসহ প্রধান সব ধর্মের গ্রন্থাবলি পাঠ করেছি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে পড়ার সুবাদে লাইব্রেরিতে থাকা বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ধর্ম দর্শন বইগুলো পড়ার চেষ্টা করি। পরে সকল ধর্ম গ্রন্থ নিয়ে পড়ালেখার পর এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে ইসলামের আদর্শের দিকে অগ্রসর হই। জাপানেও বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ নিয়ে পড়াশুনা করি।
২০১২ সালে এসে বুঝতে পারি, এগুলো মানুষের রচিত বই। এরপর আমি পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ পাঠ করি। এর পাশাপাশি আমি হাদিসও পাঠ করি। ইসলামের বিধানের ভেতরে থাকা মানবতা আমাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি ইসলামের মাঝেই সর্বোত্তম মানবতা খুঁজে পাই। এখান থেকেই ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত। ২০১৭ সালের মার্চে ইসলাম গ্রহণ করি। তখন থেকে আমি হিজাব পরিধান ও নামাজ আদায় শুরু করি।’
উল্লেখ্য, আয়শা জাহান (বর্তমান নাম) নীলফামারীর নালশামারী উপজেলার পিতা দুলাল কান্তি কুন্ডু ও মাতা মালা কুন্ডুর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১৭ সাল থেকে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। এছাড়া তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০১৯ এ নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।