মৌলভীবাজারের রাজনগরে সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের জমি ভরাটের নামে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু তুলে অন্যত্র বিক্রি করছে একটি চক্র। আশ্রয়ন প্রকল্পে মাটি ভরাটের জন্য প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে অগোচরে লাখ লাখ ঘনফুট বালু তুলে ওই প্রকল্পে দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করছে চক্রটি। এ নদী থেকে বালু তোলায় একদিকে যেমন বিঘ্নিত হবে নদীর প্রবাহ তেমনি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে নদী তীরবর্তী রাজনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার হাজারো বাড়ি ঘর। এতে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা আশ্রয় হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা ও সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী কুশিয়ারা নদী থেকে দীর্ঘ দিন থেকে পাউবোর একটি চুক্তিকে পূঁজি করে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করেছিল একটি চক্র। রাজনগর উপজেলার সাবেক ইউএনও এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ায় চুরি বন্ধ হয়েছিল। সম্প্রতি আবারো শুরু হয় বালু চুরি। লিটন নামে ওই ব্যক্তি ভোর ও সন্ধ্যারাতে বালু তুলে পালিয়ে যেত। রাজনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কয়েকবার অভিযানও চালিয়ে জেল-জরিমানাও করেন। কিন্তু গত ১৪-১৫ দিন ধরে উপজেলার আব্দুল্লাহপুর-জাহিদপুর এলাকা থেকে প্রকাশ্যেই বালু তুলছে মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যাক্তি। বালু তোলার দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিরা বলেন, ফতেপুর ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পের ৪৭টি ঘর নির্মাণের জন্য বেশ কিছু নিঁচু খাসজমি ভরাট করার প্রয়োজন। এতে প্রায় ৩ লাখ ঘনফুট বালুর প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতিতে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু তুলে এসব খাসজমি ভরাটের কাজ চলছে। এদিকে ওই প্রকল্পের ভরাটের দোহাই দিয়ে প্রশাসনের লোকজনের নজর এড়িয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বালু বিক্রি করছে তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এমনিতেই বছর বছর তাদের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে, অপরিকল্পিত ভাবে এখান থেকে বালু তোলার ফলে তাদের ঘরবাড়ি আরো ভাঙনের মুখে পড়বে। এতে মাথাগগোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু হারানোর আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
আশ্রয়ন প্রকল্পে বালু তুলার দায়িত্বে থাকা বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পে মাটি দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরা সেখানেই মাটি দিচ্ছি।
রাজনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা আক্তার জানান, আশ্রয়নের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইনেই বলা আছে সরকারী কাজে প্রয়োজন মতো তোলা যাবে। সরকারী কাজে ব্যবহারের জন্যই বালু তোলা হচ্ছে। এটা কেউ বাইরে বিক্রি করতে পারবে না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, ইউএনওকে সরকারী কাজে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বালু তোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সরকারী কাজের বাইরে অন্যত্র বিক্রির অনুমোদন নেই। বাইরে বিক্রির ব্যাপারে তিনি বলেন, এই বালু তোলে বাইরে বিক্রি করার সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি দেখছি।